৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা : ভারতীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা উৎপাদন সরিয়ে নিচ্ছে বিদেশে
অনিকেত পান্থ : ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনায় ভারতের পোশাকসহ নানা পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মার্কিন মুলুকে ভারতীয় পণ্য রপ্তানিতে এখন ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এত শুল্কের চাপে মার্কিন আমদানিকারকরা ভারতীয় পোশাকের অর্ডার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থগিত করছেন আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাতিলও করছেন। এতে ভারতীয় কোম্পানিগুলি বিদেশের কারখানায় উৎপাদন করার কথা ভাবছে। কিন্তু যেসব কোম্পানির বিদেশে কারখানা নেই, তারা বর্তমান পরিস্থিতে বেশ সমস্যায় পড়ছে। খুবই কম সময়ের মধ্যে ভারতের অগ্রণী পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল তাদের উৎপাদন ভারত থেকে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়েতেমালার কারখানায় সরিয়ে নিচ্ছে।
বিদেশি সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশিত হয়েছে যে পার্ল গ্লোবালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পল্লব ব্যানার্জি জানিয়েছেন, মার্কিন ক্রেতাদের চাপেই তারা ভারত থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন থেকে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়েতেমালার কারখানায় উৎপাদিত পোশাক আমেরিকায় রপ্তানি করা হবে। তিনি আরও বলেন, "প্রতিদিন মার্কিন ক্রেতাদের ফোন পাচ্ছি। সবাই বলছেন, ভারত থেকে সরিয়ে অন্য দেশে উৎপাদন করুন।" এজন্য এই সংস্থা তাদের উল্লেখিত চার দেশে থাকা ১৭টি উৎপাদন কেন্দ্রের মাধ্যমেই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম পারস্পরিক শুল্কনীতি গ্রহণ করেন। তখন ভারতের ওপর শুল্কহার ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এতে ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকরা ভেবেছিলেন, তারা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মার্কিন বাজারের শেয়ার দখল করতে পারবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোয় সেই সম্ভাবনার দ্বার বন্ধ হয়ে গেল। প্রসঙ্গত, মার্কিন আমদানিকারকরা ভারতীয় পোশাক নেওয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প প্রস্তাবও দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবে বাড়তি শুল্ক দুই তরফে ভাগাভাগি করে বহন করার কথা বলা হয়। কিন্তু এতেও পণ্যের দাম বাড়বে আর ভারতীয় পোশাক রপ্তানি প্রতিযোগিতার মুখে পিছিয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে।
এদিকে, যারা পুরোপুরি দেশীয় কারখানার ওপর নির্ভর করে পোশাক রপ্তানি করে তাদের জন্য ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, রিচাকো এক্সপোর্টস এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ কোটি ১০ লক্ষ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এসব পোশাকের সবই উৎপাদিত হয়েছে তাদের ভারতে থাকা কুড়িটি কারখানায়। তিনি আরও বলেন, "আমরা নেপালের কাঠমান্ডুতে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি।"
সপ্তাহের শুরুতে ভারতের বৃহত্তম জুয়েলারি ও ঘড়ি নির্মাতা টাইটান জানিয়েছে যে তারা কিছু উৎপাদন মধ্যপ্রাচ্যে স্থানান্তরের কথা ভাবছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বল্প শুল্ক সুবিধা বজায় রাখা যাবে।
অন্যদিকে, রেমন্ডের অর্থবিভাগের প্রধান অমিত আগরওয়াল বলেন, "ইথিওপিয়ায় আমাদের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানে মার্কিন শুল্ক মাত্র ১০ শতাংশ। তিন মাসের মধ্যে সেখানে উৎপাদন বাড়িয়ে মার্কিন ক্রেতাদের সরবরাহ সম্ভব হতে পারে।"
প্রসঙ্গত, দক্ষিণের তিরুপ্পুর ভারতের নিট পোশাক শিল্পের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এই শিল্পাঞ্চল থেকে দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জোগান আসে। এখন এখানে নেমে এসেছে আতঙ্ক। তবে কটন ব্লসম ইন্ডিয়ার কার্যনির্বাহী পরিচালক নাভিন মাইকেল জন জানান, তিরুপ্পুরের কিছু কারখানাকে গ্রাহকেরা অর্ডার স্থগিত রাখতে বলেছেন। আবার কেউ কেউ পরিকল্পনা করছেন ৫০ শতাংশ শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগে যতটা সম্ভব পণ্য পাঠিয়ে দেওয়ার।
No comments:
Post a Comment