Breaking

Saturday, August 16, 2025

বাঙালির বিবেক একজনই, অন্য বিবেককে মেনে নিচ্ছে না বাংলা


 বাঙালির বিবেক একজনই, অন্য বিবেককে মেনে নিচ্ছে না বাংলা

      মৃণাল কান্তি দাস : সাম্প্রদায়িক উসকানি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের রাশ ছিন্ন করে উৎসবের আবহে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে বাংলায় এখন শান্তি, সম্প্রীতি বিরাজ করছে। এই সম্প্রীতির পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা নানাভাবেই হতে পারে, হচ্ছেও। এই যেমন স্বাধীনতা দিবস, জন্মাষ্টমী ইত্যাদির আবহে এবার হঠাৎই "দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং", ইউটিউবে "বেঙ্গল ফাইলস " - এর টিজার রিলিজ এবং এদিন বেঙ্গল ফাইলস - এর ট্রেলার প্রদর্শনের উদ্যোগ গ্রহণ।

        আশার কথা এটাই যে এদিন উত্তর ভারতীয় শাসকদের ঘনিষ্ঠ পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর তৈরি সিনেমার ট্রেলার লঞ্চ হয়নি কলকাতার আইটিসি রয়েল বেঙ্গল হোটেলে। অবশ্য এনিয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়ায়। আসে পুলিশ, শেষপর্যন্ত তারা হস্তক্ষেপও করে। তবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বেঙ্গল ফাইলস রিলিজ হওয়ার কথা। সেদিন কী হবে তা কে জানে...! প্রসঙ্গত, এদিন কলকাতার সব পাঁচতারা হোটেল ও প্রতিটি মাল্টিপ্লেক্স বেঙ্গল ফাইলস - এর ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠান স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

        বাংলায় এবছর ভোট নেই। পূজার আগে ও পরে ভোট রয়েছে যথাক্রমে অসম ও বিহারে। তবে ওই দুই রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে ভোটের উত্তাপ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ বাংলা এবারও টার্গেটে রয়েছে। ২০২১ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মসনদে উত্তর ভারতের হিন্দিভাষীদের নজর পড়েছে। এটা বাংলার জন্য নতুন কিছু নয়। ইতিহাস বলছে, প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ছিল উত্তর ভারতের সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত। এজন্য যুগে যুগে অনেক লড়াই, যুদ্ধ, রক্তগঙ্গা, রক্তনদীর ধারা বয়ে গেছে। কোনো শাসকই বেশিদিন বাংলাকে দখলে রাখতে পারেননি। ইতিহাসের এই ধারা এখনও বয়ে চলেছে বঙ্গভূমিতে। 

       এজন্যই কেন্দ্রে শক্তিশালী সরকার থাকা সত্ত্বেও বাংলায় ৩৪ বছর শাসন করেছে বামফ্রন্ট। আর বাংলার নিজস্ব দল তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সাল থেকে রাজ্যের মসনদে বসে ধীরে ধীরে তার ক্ষমতা দৃঢ় ও সংহত করেছে। এদের বলা যেতে পারে, বাংলার হোসেনশাহি বা পাল শাসনের মতো। তাই চাইলেই এই দলকে সরানো যাবে না দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মতো নানা পথ গ্রহণ করতে হচ্ছে ক্ষমতালিপ্সুদের। আর এই ব্যাপারগুলি এতটাই ওপেন সিক্রেট যে সেসব জানা, বোঝার আর কিছুই কারও কাছে বাকি নেই।

       আসলে কী , বাংলার নিজস্ব বিবেক আছে। আর এই বিবেক জাগিয়েছিলেন বিশ্ববিবেককে। বাংলার এই অজ্ঞাতনামা তরুণ সন্ন্যাসী সেদিন জয় করেছিলেন পাশ্চাত্যের জনচিত্তকে। বাংলার বিবেক ছিলেন সমস্ত হানাহানি, বিভেদ, জাতপাতের, ধর্মান্ধতার ঊর্ধ্বে। এই বাংলায় তাই আর অন্য কোনো বিবেকের ঠাঁই হয় না। বাংলা আর বাঙালির বিবেককে চাইলে অন্যরা নিতেই পারেন, নিচ্ছেনও। কিন্তু বাংলা কোনো উত্তর ভারতীয় শাসকের কাছের লোক আর মদতপুষ্ট বিবেককে চায় না। 

         এজন্যই ইউটিউবে ওই বিবেকের টিজার লঞ্চ করার পর বাংলাজুড়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর থানায় থানায় এত এফআইআর হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে বাংলা শুধুই বাঙালির আর এখানকার বিবেকের। অন্য কেউ আসুন, থাকুন, অসুবিধা নেই। তবে বাঙালির সুর তাল লয় কাটার চেষ্টা করবেন না। বাঙালিকে ধর্ম, দর্শন আর আধ্যাত্মিকতা শেখাবেন না...!

No comments:

Post a Comment