Breaking

Tuesday, August 12, 2025

বৃষ্টিতে প্রাচীর ভেঙে টিনের বাড়িতে পড়ে হত দুই শিশু, থামছে না শোকাতুর মায়ের কান্না

 বৃষ্টিতে প্রাচীর ভেঙে টিনের বাড়িতে পড়ে হত দুই শিশু, থামছে না শোকাতুর মায়ের কান্না 




     অনিকেত পান্থ, ১৩ আগস্ট : গরিবের আবেদন ধনীর অট্টালিকার প্রাচীর ভেদ করে ভিতরে পৌঁছায় না। তাই প্রকৃতির রোষে ধনীর ভগ্নপ্রায় প্রাচীর ভেঙে গরিবের ঘর চাপা পড়ে অবুঝ দুই শিশুর মৃত্যু নাড়িয়ে দেয় এলাকার বিবেককে। শোকের পরিবেশে সন্তানহারা একাকী মায়ের বুকফাটা কান্না কাপিয়ে দেয় সাহুডাঙ্গির আকাশ বাতাস। এমন শোকের পরিবেশেও কোনো নেতা বা জনপ্রতিনিধির দেখা এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত মেলেনি। আশেপাশের কিছু মহিলা শোকাতুর মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তবু কান্না থামছে না সন্তানহারা মায়ের।

        উত্তরবঙ্গের প্রায় সর্বত্র মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি হয়েছে শিলিগুড়ি সংলগ্ন সাহুডাঙ্গি এলাকায়ও। বৃষ্টিতে এখানে ওখানে যতই ক্ষয়ক্ষতি হোক না কেন, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে সাহুডাঙ্গি এলাকায়। তখন রাত দুইটা। এখানকার পাগলুবস্তিতে প্রবল বৃষ্টিতে একটি পাকাবাড়ির দুর্বল প্রাচীর ভেঙে পড়ে অন্য বাড়ির টিনের ঘরের দুর্বল দেওয়ালে। পরিণামে যা হওয়ার তা-ই হলো। টিনের ঘরে ঘুমন্ত দুই শিশু চাপা পড়ে সেই প্রাচীরের নীচে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই দুই শিশু। দেড় বছরের ছেলে আর তিন বছরের মেয়েশিশু ঘুমিয়ে ছিল মায়ের সঙ্গে। ওদের বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন না।

        মায়ের আর্তচিৎকারে ছুটে আসেন আশেপাশের লোকজন। ভাঙা প্রাচীরের নীচে চাপা পড়া টিনের দুর্বল দেওয়াল কোনোরকমে খানিকটা সরিয়ে সেখান থেকে বের করে আনা হয় দুই একরত্তিকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই দুজন ততক্ষণে মৃতপ্রায়। সঙ্গে সঙ্গে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে এই দুই মৃতপ্রায় শিশুকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর তখন থেকে মায়ের অঝোর কান্না শেষ শ্রাবণের শেষ মঙ্গলবার শেষরাতে যেভাবে শুরু হয়েছে সেই কান্নার রোল জানি থামবে না সহজে। বৃষ্টি কিন্তু নিয়ম মেনে থেমে গেছে সাতসকালেই। মায়ের কান্না, চোখের জল কোনো নিয়মে বাঁধা পড়েনি। থেমে থাকেনি জীবন, তবু স্তব্ধ হয়ে গেছে মায়ের আদরের দুই শিশুর ছোট প্রাণ।

        শোকাতুর মা শুধু এটুকুই বললেন, "ওদের অনেকবার বলেছি।" ওদের বলতে পাশের বাড়ির লোকদের বোঝানো হয়েছে। দুই বাড়ির মাঝে থাকা সীমানা প্রাচীরটি ছিল ভগ্নপ্রায়। সেই প্রাচীর সারানোর কথা অর্থাৎ সংস্কারের কথা তিনি অনেকবার বলেছেন ওই পাকাবাড়ির মালিকদের। কিন্তু তাঁরা কথায় কান দেননি। সময়মতো প্রাচীরটি সংস্কার হলে বৃষ্টিতে সেটি ভেঙে পড়ত না। আর প্রাচীর ভেঙে না পড়লে ওই দুই শিশুও অকালে এভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত না। আসলে গরিবের আবেদন-নিবেদন, কান্নার রোল ধনীর অট্টালিকার মোটা দেওয়াল ভেদ করে ভিতরে পৌঁছায় না...!

No comments:

Post a Comment