Breaking

Saturday, July 19, 2025

সব সংশয় শেষে ... !

সব সংশয় শেষে ... !


বিশেষ প্রতিবেদন, অনিকেত পান্থ

           আর কোনো সংশয় নেই। অবশ্য উনি এখনও আগামীদিনের কর্মসূচি আর পদের ব্যাপারে পুরোটা খোলসা করে বলেননি। তবু সংশয়ের মূল জায়গাটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এটা স্পষ্ট হয়েছে যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে থাকছেন না। তবে অন্য ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে থাকছেন। বলছিলাম দিলীপ ঘোষের কথা আর বিজেপির ২১ জুলাই - এর শহিদ স্মরণ দিবসের কর্মসূচিতে তাঁর খড়গপুর শহরে যোগদানের কথা। প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেসের সময়ে শাসকদলের সঙ্গে নানা সময়ে রাজনৈতিক  বিরোধে জড়িয়ে বিজেপির প্রায় ২৫০ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে বিজেপি। এদের স্মরণে বিজেপিও ওইদিন  শহিদ স্মারক দিবস পালন করে থাকে।

            দিলীপ ঘোষ তৃণমূলে যাচ্ছেন না, বিজেপিতেই থাকছেন। তিনি নিজেও বলেছিলেন অন্য দলে যাবেন না। প্রয়োজনে আবার আরএসএসের কাজ করবেন। কিন্তু দিঘায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে সস্ত্রীক উপস্থিত হয়ে তিনি জল্পনা বাড়িয়েছিলেন। সেইসময় কিছুদিন দিলীপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আর তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। এতে দিলীপের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা বাড়ছিল। অবশেষে সেই জল্পনার অবসান হলো। তবে দলে তিনি কোন অবস্থানে থেকে কী কাজ করবেন, সেই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানালেন না দিলীপ। আবারও জল্পনা বাড়ালেন।

           আসলে দিলীপ ঘোষ যেখানে খবর আর আলোচনা সেখানে। দীর্ঘদিন  তেমন কোনো কর্মসূচিতে না থেকেও  তিনি আলোচনায় ছিলেন। আর থাকবেন না কেন...? তাঁকে নিয়ে আলোচনা যে অন্তহীন... ! তিনি সবসময় আলোচ্য বিষয়। কারণ তিনি যে - সে কেউ নন, তিনি দিলীপ ঘোষ। দলের প্রাক্তন সাংসদ, পূর্বতন রাজ্য সভাপতি আর একসময়ের সর্বভারতীয় সহসভাপতি হলেন দিলীপ ঘোষ। এর বাইরেও তিনি মূল সংগঠন অর্থাৎ আরএসএসের দীর্ঘদিনের প্রচারক।

          দিলীপের আর - একটা দিক বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এটা হলো তিনি অর্বাচীন বা ভুঁইফোড় কারও সামনে মাথা নোয়াতে জানেন না। কখনো সখনো এটা ওটা বলেন। তবে যথেষ্ট শালীনতাবোধ বজায় রেখেই বলেন। অবশ্য রাজনৈতিক বিরোধিতার প্রশ্নে শালীনতার ক্ষেত্রে হেরফের ঘটে। যাই হোক, দিলীপবাবু আলাদা দল করছেন, তিনি তৃণমূলে যাচ্ছেন, তিনি আলাদা মঞ্চ গড়ে নিজের অনুগামীদের নিয়ে টিএমসিতে যোগ দেবেন ---- এমন কথা শোনা গেলেও সেসব স্রেফ রটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই যে বললাম, দিলীপ ঘোষ সর্বদা খবরে থাকেন।

             দিলীপকে তাহলে কোন দায়িত্ব দেওয়া হলো, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জরুরি তলব করে তাঁকে দিল্লিতে ডেকে কোন বার্তা দিলেন। এসম্পর্কে জল্পনা শুক্রবার থেকেই ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে ছিলেন, তাঁর খবরই গুরুত্ব পেয়েছিল। তবুও দিলীপ আলোচনায় ছিলেন। আজ, শনিবার তিনি বাংলায় ফিরেছেন। স্বভাবতই সকলের কৌতূহল নিরসনে কিছু কথা তিনি বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সভা ছেড়ে হঠাৎ দিল্লি ছুটে যাওয়া প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, "আমার মনে হলো আমি গেলে আমায় কোথায় রাখা হবে, সেটা ঠিক করতে পারছে না। তাই ঠিক করেছিলাম আমি যাব না। তখনই সভাপতি ডাকলেন, আমি দিল্লি চলে গেলাম।"

            হঠাৎ দিল্লিতে তলব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সভাপতি যদি আমাকে গল্প করার জন্য ডাকেন তো কী করা যাবে...! আমি গেলাম। যাই হোক, সংগঠনের ব্যাপারে বিশদে কথা হয়েছে। বললেন ভালোভাবে কাজ করুন।" কী কথা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে দিলীপের উত্তর, "সভাপতি যখন ডেকেছেন নিশ্চয়ই গুরুত্বপুর্ণ কথা হয়েছে। সব ব্যাপারেই কথা হয়েছে উনার সঙ্গে।" তবে খড়গপুরে তাঁকে কাজে লাগানো হবে বলে সূত্রের খবরে আগেই জানা গিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে কোনো উত্তর তিনি দিলেন না বললেই চলে। তবে দিলীপ বলেন, "সভাপতির সঙ্গে নানা বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। রাজ্যের ব্যাপারে শলাপরামর্শ হয়েছে। রাজ্যের ভোট, সংগঠন ইত্যাদিও আলোচনায় ছিল।"

             প্রসঙ্গত, দিলীপ ঘোষ এখন বিজেপির রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন। দল তাঁকে যখন যেখানে যেতে বলে তিনি সেখানেই যান। তাঁর কথায়, "দল এখনও আমাকে গাড়ি, নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে। যখন যেখানে যেতে বলে আমি সেখানেই যাই। দলের হয়ে কাজ করি।" প্রশ্ন হলো, আগের মতো দলীয় পদ, দায়িত্বও কবে ফিরে পাচ্ছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে দিলীপের উত্তর, "এখনই পদ কী করে দিবে...!" যাই হোক, দিলীপ ঘোষ এখনই কী পদ ফিরে পেলেন বা তাঁকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে সেসব কোনো বড়ো কথা নয়। তাঁকে যেন দল আগের মতো গুরুত্ব দেয় সেটাই আসল। কারণ তিনি এরাজ্যে দলের ভিত গড়েছিলেন। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সংগঠন।

          সবশেষে, দিলীপ ঘোষকে দিল্লিতে তলব করে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা তাঁকে গুরুত্ব দিলে সেটা দল ও দিলীপ উভয়ের জন্যই ভালো। কেন - না কারণে- অকারণে তিনি দলবিরোধী এমন অনেক কথা বলে ফেলেন যে সেগুলি পরে বিজেপির পক্ষে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে যদি গুরুত্বপুর্ণ আর দায়িত্বশীল পদে ফিরিয়ে আনা যায়, তবে এরাজ্যে বিজেপির সংগঠন মজবুত করার ক্ষেত্রে, দলীয় দ্বন্দ্ব , বিরোধ আর সংঘাত  দূর করার ক্ষেত্রে  তা বড়ো ভূমিকা পালন করবে। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে যত তাড়াতাড়ি বিজেপি নেতৃত্ব দিলীপ ঘোষকে গুরুদায়িত্ব দেবেন, ততই সেটা দলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

No comments:

Post a Comment