Breaking

Monday, September 1, 2025

জান্তার নির্বাচন পরিকল্পনায় "সমর্থন" ভারতের, ট্রাম্প - মোদি উভয়ের নজরে মায়ানমারের বিরল খনিজ

 জান্তার নির্বাচন পরিকল্পনায় "সমর্থন" ভারতের

ট্রাম্প - মোদি উভয়ের নজরে মায়ানমারের বিরল খনিজ



         সাড়ে চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মায়ানমারে ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দল পাঠাবে ভারত। মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। সমালোচকদের দৃষ্টিতে আগেই ‘প্রহসন’ হিসেবে খ্যাত এই নির্বাচনের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দিল নয়াদিল্লি।

         চিনে রবিবার অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন মায়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকা হ্লাইংয়ের জন্য এটি ছিল বিরল কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা। রাষ্ট্র পরিচালিত 'গ্লোবাল নিউ লাইট অব মায়ানমার' জানিয়েছে, ‘বৈঠকে উভয় দেশের সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে।’

        প্রায় সাড়ে চার বছর আগে নোবেলজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ‘ভোট জালিয়াতির’ অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। এর পরই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ মায়ানমারে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তীকালীন জান্তা-সমর্থিত প্রশাসন দেশের ৩০০-র বেশি আসনে ভোট নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু এলাকা বর্তমানে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে।

          ভারতের বিদেশমন্ত্রক রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মোদি আশাপ্রকাশ করেছেন, মায়ানমারের আসন্ন নির্বাচন হবে ‘সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যেখানে সব পক্ষের অংশগ্রহণ থাকবে'। এর আগের দিন মিন অং হ্লাইং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তবে চলমান সংঘাতের মধ্যে এই নির্বাচন আয়োজন কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। গত বছর ভোটার তালিকা তৈরির জন্য পরিচালিত জাতীয় শুমারিতে সেনা-সমর্থিত কর্তৃপক্ষ ৩৩০টি টাউনশিপের মধ্যে মাত্র ১৪৫টি এলাকায় সমীক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছিল।

      এখন পর্যন্ত নয়টি দল জাতীয় পর্যায়ে ও ৫৫টি দল প্রাদেশিক পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এসব দল সেনা-সমর্থিত নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পেয়েছে। তবে সেনাবিরোধী দলগুলিকে হয় নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অথবা তারা বর্জনের ডাক দিয়েছে। পশ্চিমা দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এই নির্বাচন আসলে সেনাশাসকদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার প্রচেষ্টা, যেখানে তাদের প্রভাবশালী মিত্রদের মাধ্যমে শাসন টিকিয়ে রাখার পথ তৈরি হবে।

      এদিকে, খনিজের লোভে মায়ানমারে কৌশলগত ভুলের পথে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মায়ানমারের বিরল খনিজে নজর দিয়েছেন তিনি। সোমবার মায়ানমারের স্বতন্ত্র সংবাদমাধ্যম 'দ্য ইরাবতী' প্রকাশিত খবরেও স্পষ্ট জানা গেছে যে মায়ানমারের বিরল খনিজের প্রতি নজর দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদিও। আবার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও মোদি লিখেছেন, "আমি আর জুন্তা বস কতগুলি ব্যাপারে সহমত হয়েছি। বাণিজ্য , যোগাযোগ, নিরাপত্তা, শক্তি সম্পদ, বিরল খনিজ উত্তোলন ইত্যাদি ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি। এতে এই ক্ষেত্রগুলির আরও প্রসার হবে।"

         আসলে এশিয়া মহাদেশে চিনের পর মায়ানমারেই সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ বা খনিজ মৌল মজুত রয়েছে। উচ্চপ্রযুক্তির দ্রব্য নির্মাণ, যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ, মহাকাশ গবেষণার যানবাহন ও সামগ্রী প্রস্তুতির কাজে এই খনিজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভারতের মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি এর সন্ধান মিললেও ভারতও এখন আমেরিকার মতো চিন নির্ভরতা কমিয়ে মায়ানমারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কারণ উদীয়মান ভারতে এই বিরল খনিজের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি মায়ানমারে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন কাচিন রাজ্যের রাজধানী মিচিনা সফর করেন। এই সফরের বিষয়ে তাঁর মুখপাত্র বলেন, সফরের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে চান। চিন সীমান্তে অবস্থিত এই রাজ্য বিরল খনিজের ভাণ্ডার। চিনা প্রভাববলয়ের মধ্যে অবস্থিত মায়ানমারের খনিজে ট্রাম্পের এই আসক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল কৌশলগত পদক্ষেপের আশু পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

       প্রসঙ্গত, মায়ানমারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিরল খনিজের মজুত রয়েছে। টানা কয়েক বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। জান্তা সরকার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ কার্যত হারিয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের বিরল মৃত্তিকা খনিজে প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এই লক্ষ্যে মায়ানমারের কাচিন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মিকে (কেআইএ) সহায়তা দেওয়া থেকে শুরু করে জান্তা সরকারের কার্যত প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনার চেষ্টাও চালিয়ে যাওয়ার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে গোপনে।


No comments:

Post a Comment